ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে এবং এর তাৎপর্য ও গুরুত্বের প্রতীক হিসেবে ব্যতিক্রমধর্মী গঠনশৈলীর সহযোগে নিমার্ণ করা হয় বিজয় একাত্তর হল। এই হলটি সকল ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম হল। প্রায় ৫৮ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৬.২৪ একর জমির উপর এই হলটি নির্মিত হয়। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস-ঐতিহ্যকে নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নির্মাণশৈলীতে। মহান ত্যাগের বিনিময়ে বাঙালির শ্রেষ্ঠ বিজয় আসে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। হলের নাম তাই ‘বিজয় একাত্তর’। হলের নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং এর স্থপতি ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল আমিন। হলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের ৩০ জুন। ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর হলটির উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনটি ব্লকে (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা) বিভক্ত এই হলে ২৫০টি আবাসিক কক্ষ রয়েছে। মেঘনা ব্লকটি সার্ভিস ব্লক নামে পরিচিত, এখানে আছে মসজিদ, অডিটোরিয়াম, পত্রিকা পাঠকক্ষ, পাঠাগার, ক্যান্টিন এবং ডাইনিং হল। পদ্মা ও যমুনা ব্লকের নিচতলায় আছে দু’টি পাঠকক্ষ। হলটিতে রয়েছে ছাত্র সংসদ কক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব, কাউন্সিলিং কক্ষ, শরীরচর্চা কক্ষ, অতিথি কক্ষ, আধুনিক লিফট, সেলুন ও লন্ড্রি, ফটোকপি ও মনোহরী দোকান। এছাড়াও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত করা আছে ৪টি আবাসিক কক্ষ।
হলে প্রবেশের জন্য আছে একটি সুপরিসর তোরণ, সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য। বিভিন্ন ধাপে অনেকটা ত্রিভুজাকৃতির নির্মিত প্রবেশপথে ৭টি সুড়ঙ্গ লক্ষ্যণীয়; এর মাধ্যমে ৭জন বীরশ্রেষ্ঠ এবং বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের ৭টি ধারাবাহিক আন্দোলনের ইতিহাস বহন করে চলেছে। লাল ইটের ব্যবহারের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়কে নির্দেশ করা হয়েছে। হলের মাঝখানে আছে সুপরিসর মনোমুগ্ধকর আকর্ষণীয় বাগান; যা হলের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুন। হলের প্রথম প্রাধ্যক্ষ ছিলেন টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূইয়া। হলের পরবর্তী প্রাধ্যক্ষ ছিলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির। বর্তমানে হলটির প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. স ম আলী রেজা।