Thumb

বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানের পথিকৃৎ অধ্যাপক ড. এ. কে. নাজমুল করিম

দেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আবুল খায়ের নাজমুল করিম (১৯২২-১৯৮২) বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের জনক
হিসেবে পরিচিত। ড. নাজমুল করিম ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক এবং ১৯৪৬ সালে স্নাতকোত্তর
ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান রাজ্য বৃত্তি লাভ করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সুযোগ পান। যুক্তরাষ্ট্রের
কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে যুগপৎ ‘সরকার’ ও ‘সমাজবিজ্ঞান’ এই দুটি বিষয়ে এম. এ. ডিগ্রি এবং ১৯৬৪ সালে রকফেলার বৃত্তি
পেয়ে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের
শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনেস্কোর যৌথ সহযোগিতায় ১৯৫৭ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৫৮ সালে অধ্যাপক ড. নাজমুল করিম এই নতুন বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমাজ গবেষণার আদি সূচনা হয়েছিল ড. নাজমুল করিমের হাত ধরেই। অধ্যাপক নাজমুল করিম
সমাজবিজ্ঞানকে সকলের পাঠযোগ্য করার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বই লিখেছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সমাজবিজ্ঞান সমীক্ষণ’
বইটি। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই নাজমুল করিম দুটি প্রবন্ধ ‘ধর্মের বিবর্তন ও মার্কসবাদ’ এবং ‘ভূগোল ও ভগবান’ 

প্রকাশ করে বিদ্বৎকুলের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁর এম. এ. অভিসন্দর্ভ ‘চেঞ্জিং সোসাইটি ইন ইন্ডিয়া এন্ড পাকিস্তান’ গ্রন্থাকারে
১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয়। তাছাড়া তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভ ‘মর্ডান মুসলিম পলিটিকাল এলিট ইন বেঙ্গল’ ১৯৮০ সালে ‘ডাইনামিক্স
অব বাংলাদেশ সোসাইটি’ নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৬০ এবং ১৯৬২ সালে সমাজবিজ্ঞানের দুজন শিক্ষক অধ্যাপক পেরি বেসাইনি ও
অধ্যাপক ড. জন ই ওয়েন কর্তৃক যে দুটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশিত হয় তাতেও নাজমুল করিম মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। প্রথম গ্রন্থের
সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতি সংক্রান্ত প্রথম প্রবন্ধ এবং দ্বিতীয় গ্রন্থের সমাজতত্ত¡ অংশের প্রথম প্রবন্ধ ও ক্ষেত্র-গবেষণা অংশের দ্বিতীয় প্রবন্ধের
লেখক ছিলেন নাজমুল করিম। তিনি এই সকল প্রবন্ধে সমাজতাত্তি¡ক পদ্ধতি, উন্নয়নের লক্ষ্য ও সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে মতামত
ব্যক্ত করেন, যা বাংলাদেশের সমাজের জন্য উপযোগী বলে বিবেচিত। তাছাড়া তিনি দেশ-বিদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সেমিনারে বেশকিছু
গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছিলেন যা বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
শিক্ষায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার অধ্যাপক নাজমুল করিমকে ২০১২ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করেন।
বাংলাদেশের সমাজ গবেষণায় এবং সমাজবিজ্ঞান শিক্ষা বিকাশের ক্ষেত্রে অধ্যাপক ড. নাজমুল করিম পথিকৃৎ হিসেবে অগ্রগণ্য।