ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিমিনোলজি বিভাগের উদ্যোগে ‘ইমপর্টেন্স ইন মেডিকেল এক্সামিনেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন ইন ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে বিভাগীয় চেয়ারপার্সন শাহারিয়া আফরিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
এতে ভারতের অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস্-এর এমিরিটাস প্রেসিডেন্ট ড. পি. এম ভুজং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি-এর ডিআইজি এ কে এম নাহিদুল ইসলাম।
সেমিনারে অপরাধ তদন্তের বিভিন্ন দিক অনুসন্ধান করা, তদন্ত প্রক্রিয়ায় চিকিৎসাবিষয়ক পরীক্ষা এবং নথিপত্রের তাৎপর্যের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
মূল বক্তব্যে ড. পি এম ভুজং অপরাধ অনুসন্ধানে মেডিকেল পরীক্ষা এবং ডকুমেন্টেশনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, বাস্তব প্রমাণে অভাবে অসংখ্য বিচারাধীন মামলার ন্যায়পূর্ণ নিষ্পত্তি সম্ভব হয় না।
তিনি জানান, ভারতের আইন ও বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য এবং তাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। সুস্পষ্ট ও বাস্তবিক অনুসন্ধানের জন্য পুলিশ, তদন্ত কর্মকর্তা, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব-কর্তব্যের ব্যাপারে সকলকে সচেতন করেন তিনি। তিনি অপরাধের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য আধুনিক ও পরিবর্তনশীল বিভিন্ন মেডিকেল পরীক্ষা পদ্ধতির ধারণা প্রদান করেন। পাশাপাশি তাদের কার্যপ্রণালী এবং কার্যকারিতা সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেন।
ডিআইজি কে এম নাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশে অপরাধ তদন্তের ইতিহাস হতে বর্তমান পর্যন্ত দীর্ঘ প্রক্রিয়াশীল যাত্রা সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, অপরাধ তদন্তে বাংলাদেশে ব্যবহৃত ফরেনসিক পরীক্ষা, কার্যপদ্ধতি ও প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতির ক্রমাগত উন্নীতকরণ প্রয়োজন এবং এবিষয়ে তাঁদের তৎপরতার ব্যাপারে সকলকে আস্বস্ত করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান অপরাধ তদন্তে ডাক্তারি পরীক্ষার পরিসরটি কতটা বৃহৎ সেসম্পর্কে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের অবগত করেন এবং অপরাধের তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রমে ডাক্তারি পরীক্ষা ও নথিপত্রের গুরুত্ব উপলব্ধি করান।
বাংলাদেশের আইনানুগ কার্যক্রমে বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতা ও একে অপরকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি সম্পর্কেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীতে অপরাধ বিজ্ঞানের নানা অঙ্গনে বিচরণ করবে। তাই শিক্ষার্থীদের অপরাধ বিজ্ঞানের এমন অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা, ফরেনসিক ও মেডিকেল পরীক্ষা সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরি। তবেই ভবিষ্যতে তারা এসমস্ত অঙ্গনে দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।
আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করা হয় যেখানে আগত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্নের জবাব দেন এবং উক্ত বিষয়গুলোর প্রতি তাদের আগ্রহের প্রতি সাড়া দেন।
সমাপনী বক্তৃতায় বিভাগীয় চেয়ারপার্সন শাহারিয়া আফরিন আমন্ত্রিত অতিথিবর্গ, সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকা, সাধারণ শিক্ষার্থীবৃ্ন্দ এবং উপস্থিত সকলকে ক্রিমিনোলজি বিভাগের পক্ষ হতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বয়স, লিঙ্গ, মানসিক প্রকৃতি ভেদে অপরাধের তদন্ত এবং অপরদের শনাক্তকরণে মেডিকেল পরীক্ষার অভূতপূর্ব অবদানের কথা উল্লেখ করেন। ক্রিমিনোলজি শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ তাদের ফরেনসিক অঙ্গনে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের মাত্রায় এক নতুন গভীরতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করবে। এই আশাবাদ ব্যক্ত করে চেয়ারপার্সন শাহারিয়া আফরিন আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ক্রিমিনোলজি বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বিভিন্ন বর্ষের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।