ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন প্রস্তাব কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ফ্ল্যাগশিপ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো ও ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব পেশ করেছে ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বিষয়ক বিভিন্ন প্রস্তাবনা জাতীয় বেতন কমিশনে পেশ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় পে প্রপোজাল কমিটি’র (Pay Proposal Committee) আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আজ ২৮ অক্টোবর ২০২৫ মঙ্গলবার অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পে প্রপোজাল কমিটি’র সদস্য উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল করিম, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম (শহীদুল জাহীদ), শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ, হিসাব পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাফী মো. মোস্তফা (সদস্য সচিব) এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রস্তাবিত বেতন-ভাতা কাঠামো অনুসারে ২০২৫ সালের নতুন জাতীয় বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন ২০১৫ সালে প্রদত্ত ৮ম পে-স্কেল-এর তুলনায় ৩০০% বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিয়োগকৃত প্রভাষক ৯ম গ্রেডের পরিবর্তে ৭ম গ্রেডে যোগদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। গবেষণা ও প্রকাশনায় শিক্ষকদের আগ্রহী করতে গবেষণা অনুদান এবং প্রকাশনা প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষকতা পেশায় গবেষকদের আগ্রহী করতে দু’টি নতুন পদ (ডিস্টিংশন অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক) সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ দু’টি পদ গবেষণার মান এবং সংখ্যা বিবেচনায় প্রদান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ - এর ধারা ৭ উপ-অনুচ্ছেদ ৩ অনুযায়ী কর্মকর্তাবৃন্দের ৪র্থ গ্রেড পর্যন্ত বেতন প্রাপ্তির সুযোগ ছিল। নতুন প্রস্তাবনায় কর্মকর্তাদের ৩য় গ্রেড পর্যন্ত বেতন-ভাতা প্রাপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া কার্যভার ভাতা ২০% হারে প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির পাশাপশি টিফিন ভাতা, যাতায়াত ভাতা, ধোলাই ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
কমিটি আরও জানায়, দেশের অর্থনৈতিক ও জ্ঞানভিত্তিক উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিদ্যমান বেতন কাঠামো ও গবেষণা সহায়তার সীমাবদ্ধতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং অগ্রগতিতে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। প্রস্তাবিত কাঠামো বাস্তবায়িত হলে শিক্ষকগণ মূল্যবান গবেষণা, উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক মানের একাডেমিক কাজের প্রতি আরও অনুপ্রাণিত হবেন। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশীয় ও বৈশ্বিক পরিসরে নতুন জ্ঞানের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ১ হাজার কোটি টাকার রিসার্চ এন্ডাউমেন্ট ফান্ড এবং প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি ও আর্থিক সহায়তার জন্য আরও ১ হাজার কোটি টাকার এন্ডাউমেন্ট ফান্ড গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব তহবিলের মাধ্যমে শিক্ষকদের গবেষণা উৎসাহিত করার পাশাপাশি প্রান্তিক ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষায় অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পাবে।
এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে জাতীয় উন্নয়ন, উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক জ্ঞান সৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি মেধাবী শিক্ষক ও গবেষকদের বিদেশমুখী প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে বলে সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়।

২৮/১০/২০২৫
(মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম)
পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)
জনসংযোগ দফতর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়