ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী, বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী ড. আফিয়া দিল-এর মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবাণীতে উপাচার্য বলেন, বাংলা ভাষা-সাহিত্যে অনন্যসাধারণ জ্ঞান ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন ভাষাবিজ্ঞানী ড. আফিয়া দিল। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা ভাষা বিশেষত আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ভাষাবিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হবার নয়। উপাচার্য প্রয়াত বিজ্ঞানীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর পরিবারের শোক-সন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
ড. আফিয়া খাতুনের জন্ম ১৯২৭ সালে ঢাকায়, পৈতৃক নিবাস বর্তমান নরসিংদী জেলায়। তিনি ১৯৪০ সালে ইডেন স্কুল থেকে এসএসসি এবং কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন। তিনি ইডেন কলেজে অধ্যাপনার (১৯৫৪-১৯৬১) মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায় তিনি ১৯৫৩ সালে নিউজিল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে লিডারশিপ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে আফিয়াই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করে তিনি শিক্ষকতা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি, কলাম্বিয়া ও সান ডিয়াগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৩ সাল থেকে আফিয়া দিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগোর অ্যালিয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (সাবেক ইউনাইটেড স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি) ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর স্বামী আনোয়ার দিলও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক।
ড. আফিয়া দিলের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কালচার, বেঙ্গলি নার্সারি রাইমস: অ্যান ইন্টারন্যাশনাল পারসপেকটিভ, টু ট্র্যাডিশনস অব দ্য বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ। তাঁর বাংলায় লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের পত্র, ক্যারোলাইন প্রাটের আই লার্ন ফ্রম চিলড্রেন (অনুবাদ (১৯৫৫)), যে দেশ মনে পড়ে (১৯৫৭, ভ্রমণকাহিনী), হেলেন কেলার আমার শিক্ষক (অনুবাদ)। এ ছাড়া সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাস চাঁদের অমাবস্যা ও নাটক তরঙ্গভঙ্গ তিনি বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। স্বামী আনোয়ার দিলের সঙ্গে যৌথভাবে লিখেছেন ‘উইমেন্স চেঞ্জিং পজিশন ইন বাংলাদেশ: ট্রিবিউট টু বেগম রোকেয়া’, ‘ডেভেলপিং সেকেন্ডারি এডুকেশন ইন ওয়েস্ট পাকিস্তান’। তাঁদের ৪০ বছরের যৌথ গবেষণার ফসল ইংরেজিতে রচনা করা ৭৭৬ পৃষ্ঠার গ্রন্থ ‘বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ মুভমেন্ট অ্যান্ড ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ’।
উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগোর নিজ বাসভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
---------------
পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)
জনসংযোগ দফতর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়