প্রাণের টানে প্রাণের ক্যাম্পাসে আড্ডায় মেতে, পুরনো বন্ধু-সতীর্থদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমবেত হয়েছিলেন হাজারো ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী। ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে গতকাল ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ শনিবার দিনব্যাপী সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে ‘হিরন্ময় অ্যালামনাই মেলবন্ধন ২০১৬’। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সকালে বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতার পর স্মৃতিচারণ ও আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্টজন। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রকীবউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য অধ্যাপক মিসবাউল বাহার চৌধুরী (১৯৩৮ ব্যাচ)। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ও অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ এবং অ্যাসোসিয়েশনের বয়োজ্যেষ্ঠ নারী সদস্য ড. আফিয়া দিল (১৯৪২ ব্যাচ)। সংগঠনের মহাসচিব দেওয়ান রাশিদুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সেলিনা খালেক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মোল্লা মো. আবু কাওসার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সমবেত অ্যালামনাইদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘গৌরবোজ্জ্বল অতীতের সাথে বর্তমানের আর আগামীর বাংলাদেশের সম্পর্কের মেলবন্ধন সৃষ্টি হলো। আজকের পৃথিবীতে উন্নয়নের নানা মাপকাঠি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মাপকাঠি হলো ভালোবাসা। দেশকে ভালোবেসেই মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন আমাদের ৩০ লাখ মানুষ। আর এ ভালোবাসা শিখিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, বাঙালির পৃথক জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি মানুষকে ভালোবাসা শিখিয়েছেন।’ ১৯২১ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় সত্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অব্যাহতভাবে সত্যের সংগ্রাম করেছে। তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ে জানান, সত্য প্রতিষ্ঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় কাজ করে যাবে। উপাচার্য বলেন, আমরা অনেকে অনেক ধরনের পদে থাকতে পারি। কিন্তু সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা এখানকার শিক্ষার্থী। এ ধরনের অনুষ্ঠানের মানে হল মাতৃসম প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসা।
মিসবাউল বাহার চৌধুরী বলেন, প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহু জ্ঞানী-গুণী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অবদান রেখে যাচ্ছেন। এর ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। আমাদের সময়ে ছাত্রদের মধ্যে ছিল সহমর্মিতার সম্পর্ক আর শিক্ষকরা আমাদের ভালোবাসতেন সন্তানের মতো। আমরাও তাদের শ্রদ্ধা করতাম বাবার মতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। তা হলো সত্যবাদিতার যুগ, অস্থিরতার যুগ এবং আশ্চর্য এক পরিবর্তনের যুগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একশ’ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে, এটা ভাবতেই খুব ভালো লাগছে।’
সভাপতির বক্তব্যে রকিবউদ্দীন আহমেদ বলেন, শতবর্ষ পূর্তির আগে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তহবিল গঠনে ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সহযোগিতা করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে নারী বয়োজ্যেষ্ঠ অ্যালামনাই ১৯৪২ সালের ছাত্রী আফিয়া দিল বক্তব্য রাখতে গিয়ে যেন কিছুটা আবেগাপ্লুতই হয়ে পড়েন। তিনি পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো স্মরণ করে বলেন, আজ মনে হচ্ছে সেই দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছি। সেই দিনে যে সব স্বপ্ন দেখতাম তা আজ পূরণ হয়েছে। জীবনে কি করলাম সেটি মূল কথা নয়, কি পেলাম সেটিই মূল।
অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি সেলিনা খালেকের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে শেষ হয় উদ্বোধনী পর্বের। এরপরই ‘সেকালই ভালো ছিল একালের চেয়ে’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় সেকালের হয়ে বিতর্কে অংশে নেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক ড. অজয় রায় ও তালেয়া রেহমান। একালের হয়ে বিতর্কে অংশ নেন সঞ্জীব সাহা, নবনীতা চৌধুরী ও আল মামুন। সাবেক শিক্ষার্থীদের এই মিলনমেলা সন্ধ্যায় বিশেষ সংগীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয়।
----------------
পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)
জনসংযোগ দফতর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়