বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে রণাঙ্গনের অকুতোভয় ভারতীয় সেনাপতি লে. জেনারেল (অব:) জ্যাকব রাফায়েল জ্যাকবের মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোক বাণীতে উপাচার্য বলেন, জেনারেল জ্যাকব তৎকালীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় চিফ-অব-স্টাফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সমর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ রেসকোর্স ময়দানে যে আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল তার মুসাবিদা করেছিলেন জেনারেল জ্যাকব। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানী বাহিনীকে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নিত করতে তাঁর যে অবদান, বাঙালি জাতি তা চিরদিন স্মরণ রাখবে।
১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধে জেনারেল জ্যাকব একজন দক্ষ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর স্বাক্ষর রেখেছেন। পাকিস্তান বাহিনীর বিপর্যয়ের শুরুতে তাঁরই পরিকল্পনা অনুযায়ী ভূ-রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা দখল করে পাকিস্তানী বাহিনীকে আত্মসমর্পনে বাধ্য করেছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন দু’টি গ্রন্থ ‘স্যারেন্ডার ইন ঢাকা, বার্থ অব এ নেশন’ এবং ‘অ্যান ওডেসি ইন ওয়ার অ্যান্ড পিস’। গ্রন্থ দু’টিতে বর্ণিত হয়েছে একাত্তরের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোর কথা।
জেনারেল জ্যাকব গতকাল ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ বুধবার সকালে দিল্লীর একটি সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। ১৯২৩ সালে কলকাতায় তাঁর জন্ম। তিনি ১৯৪১ সালে ১৮ বছর বয়সে বৃটিশ-ভারতে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৭৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। জেনারেল জ্যাকব ভারতের গোয়া ও পাঞ্জাব রাজ্যের গভর্ণরের দায়িত্বও পালন করেন।
বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালের ২৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে অবদানপ্রাপ্ত বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা জানায়। সেসময় জেনারেল জ্যাকবও রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন ‘মুক্তিযুুদ্ধ সম্মাননা’। বাংলাদেশ সফরকালে জেনারেল জ্যাকব বলেছিলেন, “মুক্তিযোদ্ধা ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অসাধারণ বীরত্বের সুবাদেই স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ।”
উপাচার্য তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর পরিবারের শোক-সন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
------------------
পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)
জনসংযোগ দফতর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়