দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে মাত্র তিনটি বিভাগ নিয়ে কলকাতায় শিক্ষাপ্রাপ্ত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে বর্তমান চারুকলা অনুষদ (প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ১৯৪৮ সালে ‘গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট’, ১৯৬৩ সালে ‘পূর্ব-পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়’, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ‘বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়’ এবং ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোর অধীনে ‘চারুকলা ইনস্টিটিউট’, ২০০৮-এ ‘চারুকলা অনুষদ’ নামকরণ করা হয়) যাত্রা শুরু করে।
বিংশ শতকের গোড়ার দিকেই কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট এন্ড ক্রাফট-এর শিল্প শিক্ষায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিল্পধারণার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিল্পের ধারণাটি ভারতীয় উপমহাদেশে শিল্প শিক্ষায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে কলকাতা গর্ভনমেন্ট আর্ট কলেজের অধীনে যা ১৯০৫ সালে ইন্ডিয়ান স্টাইল অব পেইন্টিং চালু করার মাধ্যমে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পেক্ষাপটে প্রাচ্যশিল্পের পুনরুজ্জীবনের এই পটভূমি তৈরিতে ভূমিকা রাখেন শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কলেজে তৎকালীন অধ্যক্ষ পার্সি ব্রাউন। পরবর্তীতে শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রচেষ্টাতেই উনিশ শতকের গোড়ার দিকে কিংবা স্পষ্ট করে বললে, ১৯০৬ সালের পর থেকে প্রাচ্য-শিল্পদর্শন, ভাবনা ও তা প্রয়োগের সুস্পষ্ট চরিত্র দৃশ্যপটে লক্ষ্য করা যায়। প্রাচ্যচিত্র ধারার একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী শিল্পশৈলী অবনীন্দ্রনাথ তাঁর শিল্প-নিরীক্ষার মাধ্যমে তখন উপস্থাপিত করেন। যার মাধ্যমে প্রাচ্যশিল্পের যুগোপযোগী সম্ভবনাগুলো সকলের সামনে উন্মোচন করেন। এরপর তার শিষ্যগণ এ ধারাকে গতি প্রদান করেন। চারুকলা প্রতিষ্ঠার পর এই ধারার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। এর পেছনে উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করেছে নিজ দেশ ও ঐতিহ্যের প্রতি সুগভীর অনুরাগ এবং ইউরোপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের ইন্ডিয়ান স্টাইল অব পেইন্টিং বিভাগের মৌলিক ধারণাগুলো গ্রহণ করে ১৯৫৫ সালে গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট থাকা অবস্থায় প্রতিষ্ঠা করেন এই প্রাচ্যকলা বিভাগ।
বিভাগের প্রতিষ্ঠালগ্নে প্রথম শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন তৎকালীন গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউটের শিল্পী শফিকুল আমীন। পরবর্তীতে পর্যাযক্রমে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী, শিল্পী মু. আবুল হাশেম খান, শিল্পী আমিনুল ইসলাম, শিল্পী ড. মো. আব্দুস সাত্তার, শিল্পী নাসরীন বেগম এবং শিল্পী শওকাতুজ্জামান।