ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ও বৃহন্নলা সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৭ এপ্রিল) ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মেদ মাহবুবুর রহমানের উদ্যোগে এই ইফতার আয়োজন ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মেদ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা বেশ কিছু বছর ধরেই বৃহন্নলাদের সাথে কাজ করছি। তৃতীয় লিঙ্গ ও ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার আদায়ের জন্য। আমরা চেষ্টা করছি তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য। যেনো তারা রাস্তাঘাটে মানুষের অস্বস্তির কারণ না হয়। এতে জনসাধারণ ও সচেতন মহলের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। যেনো তারা সমাজে হেয় প্রতিপন্নের শিকার না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন।
মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া ট্রান্সজেন্ডার ফারহানা ফারিন বলেন, জন্মের সময় মানুষের কোনো লিঙ্গ পরিচয় থাকেনা। পরবর্তীতে বড় হবার সাথে সাথে পরিবার, সমাজের কারণে লিঙ্গ প্রকাশ পাওয়ার পাশাপাশি একে কেন্দ্র করে বৈষম্যও সৃষ্টি হয়। যেটা আমাদের বিলোপ করতে হবে। কারণ পৃথিবীতে কেউ কম বেশি নয়, সবাই সমান।
তিনি বলেন, পৃথিবীর সব মানুষের মর্যাদা এবং অধিকার সমান। এটা আমাদের বুঝতে হবে। অন্য নাগরিকদের সমান অধিকার ভোগ করার অধিকার আছে আমাদেরও। এই অধিকার বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্রেরই নয় বরং সমাজেরও। সবার কাছে নিবেদন, আমরা সবাই মানুষ, সবাই মিলে ভালো কিছু করবো আমরা।
হিজরা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত সাগরিকা বলেন, আমরা অনেক কিছু বলতে চাই। কিন্তু কেউ কান খোলা রেখে আমাদের কথা শুনতে চায় না। অনেক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রাস্তাঘাটে, সিগন্যালে হাত পাতেন। কিন্তু এখন আমাদের এই হাত পাতাকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। শুধু নিরুৎসাহিত করলেই হবে না বরং আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আমরা আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ করবো যেনো তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। কারণ, হাত পাততে আমাদের কারোরই ভালো লাগে না। শিক্ষার্থীদের কাছেও আমরা হাত পাততে চাইনা।
মতবিনমিয় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মামুন তুষার বলেন, আজকে বাংলাদেশে প্রায় আড়াই লক্ষের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখি এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা শিক্ষক হচ্ছেন, কর্মকর্তা হচ্ছেন। এগুলো আমাদের দেশের জন্য আনন্দের বিষয়।
তিনি আরও বলেন, অনেক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আছেন, যারা অন্যের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে চলেন। এটা সমস্যা না, কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তখনই, যখন তারা টাকা চেয়ে জবরদস্তি করেন। এই বিষয়ে সবার সুদৃষ্টি কামনা করি, যেন তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।