পিঠা বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিছুদিন আগেও শহুরে সংস্কৃতিতে পিঠার অবস্থান খুব নগণ্য হয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন স্টলে বার্গার, পিত্জার জোয়ারে হারিয়েই যেতে বসেছিল পিঠা। কিন্তু ধীরে ধীরে ফিরে আসছে পিঠা। রাজধানীসহ নানা শহরে পিঠা উৎসব আয়োজনে মানুষ আগ্রহ নিয়ে আসছে। ফিরে আসছে পিঠা খাওয়ার ধুম। সেই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে আয়োজন করেছে পিঠা উৎসবের।
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ক্রিমিনোলজি বিভাগে "বসন্ত বরণ ও পিঠা উৎসব"—এর উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন এবং ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান।অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিভাগের শ্রদ্ধেয় চেয়ারপার্সন শাহারিয়া আফরিন।
অনুষ্ঠানে ক্রিমিনোলজিসহ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্যান্য বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক—শিক্ষিকাবৃন্দ, ক্রিমিনোলজি বিভাগের কর্মকর্তা—কর্মচারী এবং বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ড. জিয়া উৎসবের উদ্বোধন করে বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণসহ নানা কারণে এখন আর গ্রামে—গঞ্জে সেভাবে পিঠা উৎসব হয় না। সেই উৎসব এখন শহরে নানা আনুষ্ঠানিকতায় হচ্ছে। এটা ভালো দিক। অন্তত এই উৎসবের কারণে আমরা আমাদের গ্রামের সেই পিঠাপুলির ঘ্রাণ নিতে পারছি, স্বাদ নিতে পারছি। তবে, এ উৎসবকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবারের উৎসবে প্রায় টি স্টলে প্রায় পদের পিঠা নিয়ে হাজির হয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে — রস গজা পিঠা, নাগা পিঠা, কাটা পিঠা, পাটিসাপ্টা, বিফি ভালোবাসা, আইনের প্যাঁচ, মু 'গ' অপরাধী, খেজুরে আলাপ, মধুভাত, হৃদয়হরণ ক্ষীর, ঝালবন্দি, সন্দেশচক্র, মিষ্টি স্বর, ঝালচিত্র, তেলবাজ, মহব্বতের শরবত, মুরগী মাখনী পিঠা, সবজি—পরোটা পিঠা, পান্তুয়া, রসভরা, হাঁসের চিত্তরঞ্জন, মোহন লাল পিঠা, ছানাপিঠা, ঝাল পুলি, নারকেল পুলি ,তেলের পিঠা, চন্দ্রপুলী, চুটকী পিঠা, দুধ চিতই, মার্বেল কেক, সুজির হালুয়া, চালের রুটি, ভোগের খিচুড়ি, বাসমতি চালের ভাত, সরষে পাবদা, আম তেল, বেগুন সুন্দরী সালাদসহ আরও বাহারি সব নামের পিঠা। বিকাল ৪টা পর্যন্ত নানান রকমের বৈচিত্র্যময় স্বাদের এসব পিঠা ভোজনরসিকদের রসনায় জোগায় ব্যতিক্রমী আনন্দ।
পিঠা উৎসবের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে ক্রিমিনোলজি বিভাগের বার্ষিক ম্যাগাজিন "বাণীশ্রী"—র মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিভাগের নানা বর্ষের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল লেখনীতে সমৃদ্ধ এই ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে, নানা রকমের বাহারি পিঠার সঙ্গে উৎসব আঙিনায় বিকাল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তারই অংশ হিসেবে উদ্বোধনী আয়োজন শেষে উৎসব মঞ্চে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের ছাত্র—ছাত্র এ সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নেন। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শেষে চেয়ারপার্সন শাহারিয়া আফরিন উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের উৎসাহ—উদ্দীপনা সঠিক পথে প্রয়োগ হলেই তাদের মনস্তত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা ও সৃজনশীলতা নানা কারণে প্রকাশ পেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়, ফলশ্রুতিতে বিস্তৃতি ঘটে মাদকাসক্তি ও কিশোর অপরাধের। দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে পরিচয় না থাকায় এমন নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে বলে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন তিনি।
বক্তব্য শেষে পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণকারী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি "বসন্ত বরণ ও পিঠা উৎসব" আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।